.অকাল বা অসময়, দুঃসময় কিংবা সুসময় বলতে কিছু নেই। সব সময় কেবল সময় মাত্র। আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ও হেরফের হলে সময়কে নানান রূপে নামকরণ করি ।
এমন এক অসময় আমারও এসেছিল আর তা এখনও সুসময় হয়ে উঠেনি।
তোমরা কি কখনও আততায়ীর আস্তিনে বিষাক্ত ছুরি রাখার মতো মৃত্যুকে বুকের পাঁজরে পুষে রাখতে কাউকে দেখেছো? যদি নাই বা দেখো তবে শুনো আজ এক স্বপ্নচারিনীর মৃত্যবিলাসিতা।
মেয়েটি অপর দশটি মেয়ের মতোই দু চোখে সীমাহীন স্বপ্ন সাজিয়ে কল্পনায় ডানা মেলে উড়ছিল মুক্ত আকাশে। রাজকুমার এসে একদিন জয় করে নেবে রাজকুমারীকে। লিকিন স্বপ্নেরও অবসান হয় একসময়।
স্বপ্নের রাজকুমার তার রাজকুমারীকে মাথায় সোনার মুকুট পরিয়ে রাজ্য কাঁপিয়ে স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে পারেনি। তার আগেই নির্মম বাস্তবতা স্বপ্নের দুয়ারে বিচ্ছেদের বেসুরো কড়া নাড়ছিল।
হ্যাঁ মেয়েটি তার বুকের পাঁজরে পুষে রাখা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে অকালে।
ইংরেজী ১২ মে ২০১৯ তারিখে
গোধুলির বিবর্ণ রঙকে আরও ফ্যাকাশে করে দিয়ে বিষণ্ণ সন্ধ্যায় সে এই মায়ার জগত ছেড়ে অনন্তের টানে চলে গিয়েছিল।
মৃত্যু বড়ই নির্মম, বড়ই করুণ, বড়ই নিঠুর এই কথা আমরা সকলেই বিনা বাক্যে কবুল করে থাকি। লিকিন
মৃত্যু শোক যাকে বিহ্বল করে দেয়নি, যার হৃদয়ে ক্রমাগত বিচ্ছেদ যন্ত্রণার চাবুকপেটা করেনি সে ওই শোক কল্পনায় অনুভব করতে অক্ষম।
কেবল একজন মানুষের অভাব কি ভীষণরকম ভয়ংকর হয় তা কেবল সেই হতভাগ্য ব্যক্তি অনুভব করতে পারে যার দিলে খোদা বেঁধে রেখেছেন অন্যের দিল। খোদা তোমার লীলাখেলা বুঝি এভাবেই সাঙ্গ করো আশেকের হৃদয় পঙ্গু করে ।
বিবাহযোগ্যা কণ্য যখন এভাবে চলে যায় তখন পিতা- মাতার হৃদয়ের অনন্ত দুঃখ, হাহাকার খোদার আরশ বিদীর্ণ করে কি?
মেয়েটির স্মৃতিকথার লাল- নীল ডায়েরি পড়ে আছে টেবিলে। যেখানে লিখা আছে অপ্রকাশিত, অনুচ্চারিত সব হৃদয় ব্যকুল করা কথা। সেই কথা কেউ পড়বে কোনোদিন?
হাতের বাহারি রঙের চুড়ি, পায়ের রিনিঝিনি নুপুর পড়ে আছে বাক্সে সেই চুড়ি আর নুপুর কি শব্দ ফিরে পাবে কোনোদিন? হে পরওয়ারদিগার তোমার লীলা বুঝা বড় দায়।
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে পড়া বইগুলো বস্তাবন্দি হয়ে আছে। জীবনাবসানের সাথে স্বপ্নের ও অবসান হলো। তাকে আর কোনোদিন পড়তে হবেনা।
পাঠক বিরক্তিবোধে ক্ষমা করবেন। এখনও মৃত্যুবিলাসিনীর সাতকাহন খানিকটা বাকি আছে।
মেয়েটি নিজের তসবির সংরক্ষণ করতে বেশ আনন্দ উপভোগ করতো। তার ফোনজুড়ে অসংখ্য, নানান রকম তসবির। তার কয়েকটি আমার কাছেও আছে।
সামাজিক অনুষ্ঠানে সে নিজেকে প্রমাণ করতো যে তাকে ছাড়া আনন্দ ঠিক আনন্দ হয়ে উঠেনা। উপস্থিত সকলের মন যুগিয়ে মনে জায়গা করে নিতে সিদ্ধহস্ত মেয়েটি আর কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে থাকবেনা।
এভাবে তার চারপাশকে সে ভীষণ ভালোবেসে সবাইকে দাগা দিয়ে এভাবে উড়াল দেবে তা কেউ আঁচ করতে পারেনি।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলেছিল
” যদি কখনও হঠাৎ মরে যাই তাহলে ক্ষমা করে দিবেন।” তাকে ক্ষমা করার কিছু নাই সে ক্ষমার উপরে ছিল সবসময়।
তাহলে কি সে মৃত্যুর আগেই মৃত্যুকে আহ্বান করেছিল?
সে কি তার বুকের পাঁজরে মৃত্যু পুষে রেখেছিল?
তাই তাকে সম্বোধন করেছি মৃত্যু বিলাসিনী বলে।
আর আমরা তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা এতই অগাধ নীরব কষ্টের মালিক হলাম। আমাদের বলা যায় দুঃখের ভাগাড়, দুঃখবিলাসী ও বলা যায়।
এমন অকালমৃত্যু কারও কাম্য হতে পারেনা।
আমার/ আমাদের সেই দুঃসময় আর সুসময় হয়ে উঠেনি। ক্যাম্পাসে এখনও তার পদচারণা দেখি, শুনি তার হাসির ঐকতান।
কিন্তু সে শুয়ে আছে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। তার কবরে ফুল ফুটেছে।
সে তার নিজের নাম রেখছিল একটি অতি পরিচিত ফুলের নামে।
সে ফুলটি অকালে ঝরে পড়েছে।
লেখক
দিনুর অালম
এমএসএস মাস্টার্স,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ।
পাঠকের মতামত